
আল মাহমুদ প্রিন্স: জেলার রূপসা উপজেলার শ্রীরামপুর এলাকায় সবজি চাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন চাষি মোঃ আব্দুর রশিদ মোল্লা। সবজি চাষে তার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। তিনি প্রতিদিন হাজার হাজার টাকার বিভিন্ন ধরনের সবজি বিক্রি করেন। এসব সবজির মধ্যে পালংশাক বিক্রি করে বেশি লাভবান হয়েছেন। তিনি আড়াই বিঘা জমিতে সাড়ে ছয় হাজার টাকা খরচ করে তিন মাসে দেড় লক্ষাধিক টাকার পালংশাক বিক্রি করেছেন।
রূপসার কৃষি দপ্তরের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার মোঃ মমতাজ উদ্দিনের দেয়া তথ্য মতে, চলতি বছর রূপসা উপজেলায় ৩৮৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করা হয়েছে। এ মৌসুমে সবজির আবাদের মধ্যে টমেটোর আবাদ তুলনামূলক বেশি হয়েছে। রূপসা উপজেলার আইচগাতী, শ্রীফলতলা, নৈহাটী, টিএস বাহিরদিয়া ও ঘাটভোগ ইউনিয়নে ১৫টি ব্লক রয়েছে। প্রত্যেকটি ইউনিয়নের ব্লকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দায়িত্বে রয়েছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রূপসা উপজেলা পাঁচটি ইউনিয়নে সব ধরনের সবজির কাঙ্খিত ফলন হয়েছে। এতে চাষিরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। উপজেলা শ্রীরামপুর এলাকার বাসিন্দা চাষি মোঃ আব্দুর রশিদ মোল্লার সাথে কথা হয় তার সবজি ক্ষেতে। তিনি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তিনি এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করেছেন। এর মধ্যে আড়াই বিঘে জমিতে শুধুমাত্র পালংশাকের আবাদ করেছেন। এতে তার সার ও পানি সেচ বাবদ বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে আড়াই হাজার টাকা। তিনি অগ্রহায়ণের প্রথম দিকে বিশ টাকা কেজি দরে পালংশাক বিক্রি করেছেন। বর্তমানে বিভিন্ন বাজারে পাইকারী ৮/১০ টাকা কেজি দরে পালংশাক বিক্রি করছেন। মৌসুমে এ পর্যন্ত তিনি দেড় লক্ষাধিক টাকার পালংশাক বিক্রি করেছেন। এছাড়া বাকি আড়াই বিঘা জমিতে লালশাক, ডাটা, ঢেঁড়শ, বেগুন, লাউ, খিরই, শালগমের আবাদ করেছেন। অগ্রহায়ণ থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন ধরনের সবজি বিক্রি করবেন। তিনি প্রতিদিন নতুনহাট, পালের হাট, লখপুর হাট, নৈহাটী কালিবাড়ী বাজারে সবজি বিক্রি করেন। মাঝে মাঝে ব্যবসায়ীরা তার ক্ষেত থেকে সবজি কেনেন। চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শ্রীরামপুর বিলে আঃ রশিদ, বকতিয়ার মোল্লা, আতিয়ার মোল্লা, মহসীন শেখ, কবির শেখ, আঃ গফ্ফার মোল্লা, আঃ গফ্ফার, মাইজে মোল্লা, এজাজুল শেখ, ফারুক শেখ, মুজিবর শেখ, হবি শেখ, কালাম শেখ, ওলিয়ার শেখ, মোজাম মোল্লা, রবি শেখ, নান্নু শেখ, মুজি শেখসহ শতাধিক চাষি সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
সবজি চাষি আব্দুর রশিদ মোল্লা বলেন, ‘একাগ্রচিত্তে নিয়মিত সুষ্ঠু পরিচর্যার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় বিজ, সার, কীটনাশক ব্যবহারে ভালো ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। তিনি বলেন, যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহলে সবজির আবাদ করে অনেক বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব। তিনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা পেলে সবজি চাষে আরো মুনাফা পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
নৈহাটী কালিবাড়ি বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ শহিদ হালদার বলেন, ‘আমি প্রতিদিন শ্রীরামপুর গ্রামের রশিদ মোল্লার ক্ষেত থেকে সবজি পাইকারী দামে কিনে বিক্রি করি। কথা হয় নেহালপুর এলাকার বাসিন্দা চাষি মোঃ মোস্তফা শেখের সাথে। তিনি এ বছর দুই বিঘে জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেছেন। এর মধ্যে পালংশাক চাষ করেছেন পাঁচ কাঠা জমিতে। তিনি এ পর্যন্ত অনেক টাকার সবজি বিক্রি করেছেন।
রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ ফরিদুজ্জামান এ প্রতিবেদককে বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে ভালো পরামর্শ দেওয়ার কারণে রূপসা উপজেলায় আশানুরূপ সবজি উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষিরা ভালো ফলন পাচ্ছে।
নৈহাটী ইউনিয়নের ৮নং ব্লকে দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর মোল্লা বলেন, ‘তার শ্রীীরামপুর ও নেহালপুর ব্লকে এ বছর ৫০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ করা হয়েছে। এ ব্লক দু’টিতে ভালো সবজি উৎপাদন হয়েছে। চাষিরা তাদের কাঙ্খিত ফলন পাবেন বলে তিনি আশা করছেন। ঘাটভোগ ইউনিয়নের ১৫ নং ব্লকে দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার শেখ রাজেদ আলী বলেন, এ বছর খরিপ-১ মৌসুমে ২৫০ হেক্টর জমিতে ঘেরের আইলে শসার আবাদ হয়েছে। এছাড়া রবি মৌসুমে টমেটোর আবাদ করা হয়েছে ২০০ হেক্টর জমিতে। চাষিরা কাঙ্খিত সবজির ফলন পেয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আগামী খরিপ-১ মৌসুমে ঘেরের আইলে চিচিংঙ্গার আবাদ করা হবে ৫০ হেক্টর জমিতে। ঘাটভোগ ইউনিয়নের ১৩নং ব্লকে দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মেহেদী হাসান বলেন, এ বছর ১২ দশমিক ৮ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে টমেটোর আবাদ বেশি ভালো হয়েছে। টিএস বাহিরদিয়া ইউনিয়নের ১০, ১১ ও ১২নং ব্লকে দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার করুনা কান্তি সরকার বলেন, তার ব্লকের স্বল্প বাহিরদিয়া ও কাজদিয়া বিলে ১৪ হেক্টর জমিতে এ বছর সবজির আবাদ হয়েছে। কৃষকরা আশানুরূপ ফলন পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।