সংসদ নির্বাচন: মামলার প্রশ্নে বিএনপির যত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব

এসবিনিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে গত ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগের সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে বিরোধীদল বিএনপি তাদের অভিযোগ নিয়ে মামলা করার না করার প্রশ্নে সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েছে।
দলটির নেতারা বলছেন, নির্বাচনে অনিয়ম বা কারচুপির চিত্র সংবাদ মাধ্যমে যতটুকু প্রকাশ হয়েছে, এর বাইরে বিএনপি বা তাদের জোটের প্রার্থীরা সেভাবে সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারেন নি।
এরপরও এখন তারা সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহের একটা চেষ্টা করছেন।
তবে সময়সীমা অনুযায়ী ১৫ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে হবে।
নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে এতটাই হতাশা তৈরি হয় যে, দলটির কার্যক্রমই থমকে যায়।
এই অবস্থায় বিএনপির নীতিনির্ধারক বা সিনিয়র নেতারা নিজ থেকে দায়িত্ব নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না।
নির্বাচনে অংশ নেয়া এবং নানান অভিযোগ ওঠার পরও বর্জন না করে শেষপর্যন্ত সেই নির্বাচনে থাকা- এই বিষয়গুলোতে বিএনপিতে এখনও বিতর্ক চলছে।
ফলে বিভিন্ন ইস্যুতে দলটি সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।
নির্বাচনে অনিয়ম বা কারচুপির অভিযোগ নিয়ে প্রথমে দলটির সিনিয়র নেতৃত্বের মাঝে মামলা না করার একটা চিন্তা ছিল। এখন আবার মামলা করার পক্ষে একটা মত তৈরি হয়েছে।
এরমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে ঢাকায় নেতাদের সাথে এই ইস্যুতে আলোচনা করেছেন।
কিন্তু দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে মামলা করার ব্যাপারে তারা এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেননি।
মি: রিজভী বলেন, “সিদ্ধান্ত এখনও নেয়া হয়নি। আসলে কিভাবে মামলা করা হবে না হবে, এগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে।মানে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা, কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা নয়।”
“দলের সিনিয়র নেতারা, আইনজীবী তারা বিভিন্ন মতামত দিচ্ছেন। কারণ এখানে আইনি লড়াই বা যে লড়াইয়ের কথা বলি না কেন, সবক্ষেত্রেই তো একটা নৈরাজ্য বিরাজ করছে, সেই ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়াও তো ঝক্কি ঝামেলার বিষয়। এ ব্যাপারে এখনও আলোচনা চলছে।”
বিএনপির তৃণমূলের নেতাদের অনেকে বলেছেন, মামলা নিয়ে তাদের দলের সিদ্ধান্তহীনতার পিছনে মুল কারণ হচ্ছে সাক্ষ্য প্রমাণের অভাব।
নির্বাচনে কারচুপি বা অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে প্রথমে মামলা না করার একটা ধারণা দেয়া হয়েছিল প্রার্থীদের বা তৃণমূলে। ফলে তারা সাক্ষ্য প্রমাণের দিকে সেভাবে নজর দেননি।
এছাড়া বিএনপির নেতাদের অনেকে বলেছেন, সরকারের নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থীরা যেহেতু সেভাবে নির্বাচনী মাঠে থাকতে পারেননি, সেকারণে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ তাদের কাছে নেই।
এখন দলের পক্ষ থেকে মামলা করা হতে পারে, এমন ধারণা দেয়ার পর বিএনপির নেতারা সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছেন।
খুলনা নগরীর একটি আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি বলছিলেন, সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া বেশ কঠিন হচ্ছে।
“পুরো ভোটকেন্দ্রই ছিল সরকারি দলের এবং সরকারি বিভিন্ন বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। সেখানে সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়াটা খুব কঠিন,” বলেন মি: মঞ্জু।
“আর যারা সাক্ষ্য দেবেন, সেই প্রিজাইডিং অফিসার বা পোলিং অফিসার, তারা তো সরকারের মত না নিয়ে আমাদের কথায় সাক্ষ্য দেবেন না।”
তিনি আরো বলেন, “এখানে একমাত্র জনগণই পারে সাক্ষ্য দিতে, যে তারা ভোট দিতে পারেননি বা তাদের ভোট আরেকজন দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু জনগণও তো বর্তমান পরিস্থিতিতে ভয়ভীতি উপেক্ষা করে বিএনপির করা মামলায় সাক্ষ্য দেবে না।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিকভাবে অনেক অভিযোগ তোলা যেতে পারে। অনেক অনিয়ম প্রকাশ্যেও হতে পারে। কিন্তু আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে বা মামলা করতে গেলে সাক্ষ্য প্রমাণ প্রয়োজন।
নির্বাচন কমিশনের সাবেক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জেসমিন টুলী বলছিলেন, মামলা করা হলে, তখন অভিযোগের পক্ষে দলিল সাক্ষ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হবে।
এদিকে, নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের পর ৪৫দিনের মধ্যে অভিযোগের ব্যাপারে যেকোনো সংক্ষুব্ধ প্রার্থী মামলা করতে পারেন। সে অনুযায়ী ১৫ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে মামলা করতে হবে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, দু’একদিনের মধ্যেই মামলা করার না করার প্রশ্নে তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার চেষ্টা করবেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

Related posts