
মুস্তাফিজুর রহমান
বছর ঘুরে মুললমানদের ঘরে ফিরে এসেছে- মুমিন বান্দাদের ইবাদমের মওসুম, পবিত্র মাহে রমজান। এই রমজান মাসে রোজা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমান নারী-পুরুষের জন্য রোজা পালনকে ফরজ করা হয়েছে। কেননা- এই রোজা রাখার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য ও তাকওয়া লাভে ধন্য হয়। রোজা পালনের বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম বা রোজা ফরজ করা হয়েছে; যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল; যাতে তোমরা তাকওয়া (আত্মশুদ্ধি) অর্জনে করতে পার (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)।
রোজা পালনের জন্য সাহরি করা আবশ্যক। হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাহরি গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন। আবার যথাসময়ে ইফতার গ্রহণেরও তাগিদ প্রদান করেছেন। হজরত আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমাদের রোজা এবং আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হল সাহরি খাওয়া। অর্থাৎ মুসলিমরা সাহরি খায় আর ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরা সাহরি খায় না (মুসলিম, নাসাঈ)।
মাহে রমজানের রোজা পালনে সাহরি ও ইফতারের যেমন গুরুত্ব রয়েছে তেমনি রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়ার রয়েছে যথেষ্ট গুরুত্ব। সাহরি খাওয়ার পর রোজা নিয়ত করা জরুরি।
রোজার নিয়ত
নাওয়াইতু আন আছুম্মা গাদাম মিন শাহরি রমাদানুল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
বাংলায় নিয়ত- হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোজা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
ইফতারের দোয়া
আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিক্বের মাধ্যমে ইফতার করছি।
তারাবিহ নামাজের নিয়ত
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা, রাকাআতাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা, (জামাতে হলে- ‘ইক্তাদায়তু বিহাজাল ইমাম’ আর ইমামতি করলে- ‘আনা ইমামুল হাদারা’ বলতে হবে) মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।
তবে নিয়ত আরবিতেই করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বাংলাতেও করা যাবে।
বাংলা নিয়ত- আমি কেবলামুখি হয়ে (জামতে হলে- ‘ইমামের পেছনে’ বলতে হবে) দুরাকাত তারাবির সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজের নিয়ত করছি; আল্লাহু আকবার।
তারাবিহ পড়ার নিয়ম
২ রাকাআত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা। আবার ২ রাকাআত নামাজ পড়া। এভাবে ৪ রাকাত আদায় করার পর একটু বিশ্রাম নেয়া। বিশ্রামের সময় তাসবিহ তাহলিল পড়া, দোয়া-দরূদ ও জিকির আজকার করা। তারপর আবার ২ রাকাত করে আলাদা আলাদা নিয়তে তারাবিহ আদায় করা। প্রতি ৪ রাকাতের পর আবার বিশ্রাম নেয়া ও দোয়া পড়া।
তারাবিহ নামাজের দোয়া
৪ রাকাত তারাবিহ আদায় করার পর ব্যাপক প্রচলিত একটি দোয়া রয়েছে। যা দেশের প্রায় মসজিদে পড়া হয়। আর তা হল- সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুত আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।
তারাবিহ নামাজের মুনাজাত
আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া জাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আজিরনা মিনান নার। ইয়া মুজিরু, ইয়া মুজিরু, ইয়া মুজির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল
রমজান মাসকে বলা হয় ইবাদতের বসন্তকাল। এই মাসে আমলের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। আসলে রমজান হল তাকওয়া অর্জনের প্রশিক্ষণের মাস। তাকওয়া অর্জনই রমজানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। রমজানের আমল করলে একটি কাজের জন্য ৭০ বা তার চেয়েও বেশি নেকি পাওয়া যায়। রমজানের বিশেষ ৩টি আমল হল- ১. কম খাওয়া, ২. কম ঘুমানো, ৩. কম কথা বলা। এছাড়া হারাম থেকে দূরে থাকা; চোখের হেফাজত করা, কানের হেফাজত করা, জবানের হেফাজত করা মাহে রমজানের অন্যতম পালনীয় আমল।
পরিপূর্ণ আদবের সাথে সিয়াম (রোজা) পালন করা
সময়মত প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজ আদায় করা
সসিহভাবে কোরআন শেখা ও তেলাওয়াত করা
অপরকে কোরআন পড়া শেখানো
যথা সময়ে সাহরি খাওয়া
তারাবিহ নামাজ পড়া
বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা
বেশি বেশি জনকল্যাণকর কাজ করা
নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া
বেশি বেশি দান-খয়রাত করা
উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা
ইতিকাফ করা
দাওয়াতে দ্বীনের কাজ করা
সামর্থ থাকলে ওমরাহ পালন করা
শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ করা
বেশি বেশি দোয়া ও কান্নাকাটি করা
সময়মত ইফতার করা ও অন্যকে ইফতার করানো
বেশি বেশি তওবা ও ইস্তিগফার করা
তাকওয়া অর্জন করা
জাকাতের উপযুক্ত হলে তা আদায় করা
ফিতরা দেয়া
অপরকে খাবার খাওয়ানো
আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নীত করা
কোরআন মুখস্থ বা হিফজ করা
আল্লাহর জিকির করা
নিয়মিত মিসওয়াক করা
বুঝেশুনে কোরআন পড়া ও আমল করা