
এসবিনিউজ ডেস্ক: মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় সরকারি চাকরিতে নিয়োগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, শিক্ষা বৃত্তি পাওয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সনদ যাচাইয়ে (ভেরিফিকেশন) নতুন ‘প্রমাণক’ নির্ধারণ করেছে সরকার। এর আওতায় সংশ্নিষ্ট মুক্তিযোদ্ধার সনদ যাচাইয়ের সব কার্যক্রম মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া গেজেট ও তথ্যের আলোকে নির্ধারিত হবে। চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান এবং ভর্তি নেওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঋণদাতা ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আর মন্ত্রণালয়ের মুখোপেক্ষী হতে হবে না। একইভাবে সংশ্নিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, তাদের সন্তান এবং পোষ্যদেরও সনদ যাচাইয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে আসার প্রয়োজন হবে না।
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা চাই না মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে এসে সংশ্নিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা বা তার পরিবারের সদস্যরা ভিড় করুন, ভোগান্তির শিকার হন। সনদ যাচাইয়ের বিকল্প নির্ধারণে কয়েক বছর ধরেই আমরা কাজ করছি। প্রাথমিকভাবে বছরখানেক আগেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সনদ যাচাই-প্রত্যয়নের কাজ শুরু হয়েছিল। তবে এবার সুনির্দিষ্ট একটি গাইডলাইন করেছি। যার মাধ্যমে ওয়েবসাইট থেকেই সংশ্নিষ্ট মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও তথ্যাদি চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সংশ্নিষ্টরা যাচাই করতে পারবেন। মন্ত্রণালয় আর কোনো সনদ প্রত্যয়ন বা যাচাই-বাছাই করবে না।’
গত ১৮ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সনদ যাচাইয়ের বিষয়ে একটি পরিপত্র ইস্যু করা হয়। পরে প্রমাণক সংক্রান্ত পরিপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীসহ সরকারের সব মন্ত্রণালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়েছে। পরিপত্রে সাতটি শ্রেণিতে ৩৩টি প্রমাণক নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে- ক. ভারতীয় তালিকা (পদ্মা, মেঘনা, সেক্টর, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী); খ. লাল মুক্তিবার্তা (চূড়ান্ত লাল বই) ও লাল মুক্তিবার্তায় স্মরণীয় যারা বরণীয় যারা; গ. গেজেট (বেসামরিক গেজেট, প্রবাসে বিশ্ব জনমত গেজেট, বিসিএস ধারণাগত জ্যেষ্ঠতাপ্রাপ্ত গেজেট, বিসিএস গেজেট, স্বাধীন বাংলা বেতার শব্দসৈনিক গেজেট, বীরাঙ্গনা, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল, ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনী, বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে নিয়োজিত বা দায়িত্ব পালনকারী মুক্তিযোদ্ধা, মুজিবনগর গেজেট; ঘ. বাহিনী গেজেট (সেনা, নৌ, বিমান, বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও নৌ-কমান্ডো); ঙ.শহীদ গেজেট (শহীদ বেসামরিক গেজেট, সশস্ত্র বাহিনী শহীদ গেজেট, শহীদ বিজিবি গেজেট, শহীদ পুলিশ গেজেট); চ. খেতাবপ্রাপ্ত গেজেট; এবং ছ. যুদ্ধাহত (যুদ্ধাহত গেজেট, যুদ্ধাহত পঙ্গু, যুদ্ধাহত বিজিবি গেজেট ও যুদ্ধাহত সেনা গেজেট)।
নতুন এই তালিকা অবিলম্বে কার্যকরের কথা জানিয়ে পরিপত্রে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাইয়ে আগের সব বিজ্ঞপ্তি বাতিল করা হলো। এ ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনুকূলে আর সাময়িক সনদ দেওয়া হবে না বলে মুক্তিযোদ্ধাদের যথার্থতা নির্ণয়ে সাময়িক সনদ বা বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ (বামুস) সনদ প্রযোজ্য হবে না। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে কোনো মুক্তিযোদ্ধার তথ্যাদি ও গেজেট না থাকলে আবেদনকারী কোনো ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কোনো সুবিধা প্রাপ্য হবেন না। এ নিয়ে কোনো অস্পষ্টতা দেখা দিলে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সংশ্নিষ্টদের মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করতেও পরিপত্রে বলা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সংশ্নিষ্টরা জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/পোষ্যদের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ, ভর্তি, অবসর-উত্তর (পিআরএল), ব্যাংক ঋণ, চিকিৎসা সেবাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সনদ যাচাইয়ের জন্য প্রায়ই অনেককে ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ভিড় করতে হয়। অনেক সময় সনদগুলো মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই করে নেওয়ার পরেও চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান এবং ভর্তি নেওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকেও ফের সনদগুলো যাচাইয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ফলে নানা ধরনের ভোগান্তি ও দীর্ঘসূত্রতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও পোষ্যদের। এমন পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয় না এসে ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই সংশ্নিষ্ট মুক্তিযোদ্ধার সনদ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য এই নতুন প্রমাণক নির্ধারণ করেছে সরকার।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, দেশে এখন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় দুই লাখ ৩৮ হাজার। তবে ডাটাবেইসে যুক্ত হয়েছেন দুই লাখ ১১ হাজার। বর্তমানে ভাতা পাচ্ছেন দুই লাখ তিন হাজার মুক্তিযোদ্ধা। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা ১২ হাজার টাকা মাসিক ভাতা পান। এ ছাড়া যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারের সদস্যরাও শ্রেণিভেদে ২০ হাজার থেকে শুরু করে ৪৫ হাজার টাকা হারে মাসিক ভাতা পাচ্ছেন। এর সঙ্গে গত অর্থবছর থেকে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা হারে বিজয় দিবস ভাতা এবং সব মুক্তিযোদ্ধার অনুকূলে মূল ভাতার ২০ ভাগ হারে বাংলা নববর্ষ ভাতা দেওয়া হচ্ছে।