
এসবিনিউজ ডেস্ক: তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যারা ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন, তাদের কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে। তাদের এসব বক্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের জন্য সুরক্ষাসামগ্রী হিসেবে মাস্ক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আগে থেকেই বলবৎ যে নিয়মে সভা-সমাবেশের জন্য অনুমতি নেওয়ার কথা, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ যখন আবার সেটা মনে করিয়ে দিল, তখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব এটা নিয়ে কথা বলছেন। আসলে তারা হঠাৎ করে কিছুদিন ধরে বিনা অনুমতিতে সমাবেশ আয়োজন করছিলেন। আর আমরা দেখেছি, তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে হঠাৎ চোরাগোপ্তা মিছিল বের করে গাড়ি ভাংচুর করা। অনুমতি নিয়ে তো সেটা করতে একটু অসুবিধা হয়।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যখন মুক্তাঙ্গণের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছিল, মুক্তাঙ্গণে অনুমতি দেওয়া হয় নাই। কারণ মুক্তাঙ্গণের আশেপাশে বিল্ডিং নাই। বিল্ডিংয়ের উপর থেকে গ্রেনেড ছোঁড়ার সুযোগ ছিল না। এজন্য মুক্তাঙ্গণে না দিয়ে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে, কারণ বঙ্গবন্ধুর এভিনিউয়ের চারপাশের ভবন থেকে গ্রেনেড ছোঁড়ার সুবিধা ছিল।’
দেশে ভাস্কর্য নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় ফতোয়া দেওয়া হলো যে, যারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করছে তারা সবাই কাফের। সেই ধারাবাহিকতায় তাদেরই প্রেতাত্মারা আজকে ভাস্কর্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।’
সমগ্র বিশ্বের উদাহরণ দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলামি দেশগুলোসহ সারাবিশ্বে এমনকি সৌদি আরবেও মানুষের অবয়বসহ নানা ভাস্কর্য রয়েছে। ইরানে বিপ্লবের মাধ্যমে যেখানে ইসলামি সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে আয়াতুল্লাহ খোমেনিরও ভাস্কর্য আছে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশেও অনেক আগে থেকে বহু নেতা, কবি, সাহিত্যিকের ভাস্কর্য আছে। তখন কেউ কিছু বলেন নাই। হঠাৎ করে এই প্রশ্ন আনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত। কারণ যারা এই প্রশ্নগুলো উপস্থাপন করছেন তাদের কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা আছে। তারা বিভিন্ন দলের নেতা, তাদের দলগুলো আবার নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। সুতরাং তারা যখন বক্তব্য দেয়, তখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই বক্তব্য দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা এতোদির ধরে স্বাধীনতা বিরোধীদেরকে লালন করেছে, পোষণ করেছে, স্বাধীনতাবিরোধীদের দিয়ে রাজনীতি করে, তারাই এটার পিছনে ইন্ধন দিচ্ছে। সুতরাং আমাদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।’ ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম, এর অপব্যাখ্যা করে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ জানানা ড. হাছান।
সর্বসাধারণের মাঝে বিতরণের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের ত্রাণ কমিটিকে ৫০ হাজার মাস্ক দেওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগ ও সিডনি আওয়ামী লীগকে ধন্যবাদ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রায় ৬০০ কর্মী-সমর্থক, মন্ত্রিসভার সদস্য, পার্লামেন্ট সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটির অনেকেই মারা গেছেন। ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে তারা সবাই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, বহুজন আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে আছে, থাকবে।’
আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মাস্ক প্রদানকারী দু’টি সংগঠন অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাউসুল আজম শাহজাদা এবং সিডনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আজাদকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল মজিদের হাতে মাস্ক তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী।