
এসবিনিউজ ডেস্ক: ভারতের পার্লামেন্টে এই মুহুর্তে মহিলা সংসদ সদস্যর সংখ্যা শতকরা এগারো ভাগ – অর্থাৎ অন্যভাবে বললে, প্রতি দশজন এমপি-র মধ্যে মহিলা মাত্র একজন।
আসন্ন নির্বাচনে ভারতের বড় রাজনৈতিক দলগুলো বেশির ভাগ আসনেই তাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে ফেলেছে – আর সেই তালিকা বিশ্লেষণ করে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মহিলা এমপি-র সংখ্যা যে এবারেও খুব একটা বাড়বে, তা আদৌ মনে হচ্ছে না।
তৃণমূল কংগ্রেস বা বিজু জনতা দলের মতো কয়েকটি আঞ্চলিক দল এক তৃতীয়াংশ বা তারও বেশি আসনে মহিলা প্রার্থী দিয়েছে ঠিকই – কিন্তু বিজেপি বা কংগ্রেসের মতো জাতীয় দলগুলোতে সেই হার শতকরা দশ-বারো ভাগের বেশি নয়।
অথচ ভারতের পার্লামেন্টে এক-তৃতীয়াংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত করার জন্য চিন্তাভাবনা চলছে গত পঁচিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে।
বছর দশেক আগে এই লক্ষ্যে একটি বিল রাজ্যসভাতেও পাস হয়েছিল – কিন্তু লোকসভায় পেশ না-করায় তা আপনা থেকেই খারিজ হয়ে গেছে।
প্রায় সব রাজনৈতিক দলই মুখে অন্তত এই বিলকে সমর্থন জানায়, কিন্তু নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার সময় তাদের মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা থাকে হাতেগোনা।
অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মসের অন্যতম সমন্বয়কারী উজ্জয়িনী হালিম বিবিসিকে বলছিলেন, আগামী লোকসভাতেও মহিলা এমপি-র সংখ্যা বাড়বে সেই সম্ভাবনা বেশ কম।
১৯৯৬ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টের এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা অটল বিহারি বাজপেয়ি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী নরসিমহা রাও। এই ছবিতে চোখে পড়ছে একজন মাত্র নারী।
ড: হালিমের কথায়, “তৃণমূল বা বিজেডির মতো যে আঞ্চলিক দলগুলো বেশি বেশি মহিলা প্রার্থী দিয়েছে তারা কতটা জিতে আসতে পারেন তার ওপর এই সংখ্যাটা অনেকটা নির্ভর করবে।”
“এই দলগুলো যদি বেশি আসনে জিততে পারে তাহলে মহিলা এমপি-র সংখ্যাও হয়তো অল্প কিছু বাড়বে। কিন্তু ৩৩ শতাংশ নারী এমপি-র যে বিরাট পরিবর্তনটা আমরা দেখতে চাই সেটার কোনও সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।”
“সেই জায়গাটা আসলে তৈরিই হয়নি – পিতৃতান্ত্রিকতা আসলে এখনও খুবই জোরালো। মেয়েরা জিতে আসতে পারবেন না বিষয়টা মোটেই তা নয়, কিন্তু তারপরও তারা টিকিট পাচ্ছেন না।”
“আর অন্তত তেত্রিশ শতাংশ আসনে নারীরা যদি মনোনয়নই না-পান, তাহলে তেত্রিশ শতাংশ নারী এমপি তো আমরা কোনও দিনই পাব না”, বলছিলেন উজ্জয়িনী হালিম।
বড় দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মহিলা প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস – পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১৭টিতেই তারা মহিলা প্রার্থী দিয়েছে, শতকরা হিসেবে যা ৪১ ভাগ।
বস্তুত আজ থেকে ঠিক এক মাস আগে আন্তর্জাতিক নারী দিবসেই সেই দলের নেত্রী মমতা ব্যানার্জি কথা দিয়েছিলেন, মহিলাদের তিনি বেশি বেশি করে মনোনয়ন দেবেন।
সে দিন তিনি বলেছিলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস হল ভারতের একমাত্র রাজনৈতিক দল, পার্লামেন্টে যাদের ৩৫ শতাংশ নির্বাচিত নারী সদস্য আছে। এটা আর কোনও দলের নেই।”
“আমরা যখন সামনেই আগামী নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই করব, দেখবেন আমরা ৩৫ শতাংশেরও বেশি আসনে মহিলাদের মনোনয়ন দেব। এটা আমাদের দলের কমিটমেন্ট।”
মমতা ব্যানার্জি সেই প্রতিশ্রুতি রেখেছেন, তার পাশের রাজ্য ওড়িশায় মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কও এক তৃতীয়াংশ আসনে নারীদের প্রার্থী করেছেন।
কিন্তু বিজেপি কেন তার ধারেকাছেও যেতে পারছে না, সেই প্রশ্ন তুলে দলের ভেতরেই একরকম বিদ্রোহ করে বসেছেন বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সাইনা এনসি।
তিনি বলছেন, “ভোটারদের অর্ধেকই মহিলা – অথচ তারপরও পার্লামেন্টে সেই মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব নেই বললেই চলে। মমতা ব্যানার্জি-নবীন পট্টনায়করা যদি পারেন, অন্য দলগুলো কেন পারবে না?”
“আমাদের দাবি, পার্লামেন্টে মহিলা বিল পাস হোক বা না-হোক, দেশের প্রতিটা রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের ইশতেহারে ঘোষণা করতে হবে তাদের এক-তৃতীয়াংশ প্রার্থীই হবেন মহিলা।”
কিন্তু কেন মহিলাদের প্রার্থী করতে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর এত অনীহা?
গবেষক গৌতম ব্যানার্জি বিজেপির দৃষ্টান্ত দিয়ে বলছিলেন, দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বে মহিলারা না-এলে এই পরিস্থিতি পাল্টানো মুশকিল।
মি ব্যানার্জি বিবিসিকে বলছিলেন, “বিষয়টা শুধু প্রার্থী দেওয়ার নয়। একটা রাজনৈতিক দলের হায়ারার্কিতে বা শীর্ষ নেতৃত্বে মেয়েরা না-থাকলে এই মানসিকতা পাল্টাবে না। কিন্তু পার্টি লিডারশিপে মেয়েরা তো সেভাবে নেই।”
“মেয়েরা নেতৃত্বে এলে হয়তো একটা কমিটমেন্ট পাওয়া যাবে যে, হ্যাঁ, আমাদের দল মেয়েদের বেশি করে টিকিট দেবে। কমিট করতে করতে, আস্তে আস্তে দিতে দিতে হয়তো একটা পরিবেশ তৈরি হবে!”
“বিজেপিতেই যেমন দেখুন, সেই দলে কখনও কোনও নারী সভাপতি হননি। সুষমা স্বরাজ বা নির্মলা সীতারামনকে উঁচু পোর্টফোলিও দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে, কিন্তু সব দলের সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রীয় স্তরেই!”
তবে পাশাপাশি কংগ্রেসের নেতৃত্বে যখন সোনিয়া গান্ধী ছিলেন – কিংবা মায়াবতীর নেতৃত্বে বহুজন সমাজ পার্টিও কখনও মহিলাদের প্রার্থী করাকে গুরুত্ব দেয়নি।
এবং মাসদেড়েক বাদে ভারতে যে সতেরোতম লোকসভা গঠিত হবে, সেখানেও পুরুষপ্রধান চেহারাটা আদৌ পাল্টাবে এমন কোনও লক্ষণ মোটেই দেখা যাচ্ছে না। বিবিসি