বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০২৩ ❙ ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শ ছড়িয়ে পড়ুক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে: রাষ্ট্রপতি

এসবিনিউজ ডেস্ক: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার আদর্শ আমাদের চিরন্তন প্রেরণার উস। তার নীতি ও আদর্শ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়ুক, গড়ে উঠুক সাহসী, ত্যাগী ও আদর্শবাদী নেতৃত্ব, এ প্রত্যাশা করি।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বছরজুড়ে মুজিববর্ষের আয়োজনের উদ্বোধনে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, আজ ১৭ই মার্চ, বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। এ বছর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমি এই মহান নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। বছরজুড়ে দেশ-বিদেশে সাড়ম্বরে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের লক্ষ্যে সরকার ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করেছে। জন্মশতবার্ষিকীর এই বর্ণাঢ্য আয়োজন যথাযথ উসাহ ও উদ্দীপনার মাধ্যমে উদযাপনের জন্য আমি দেশবাসী ও প্রবাসী বাঙালিদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ক্ষণজন্মা এই মহাপুরুষ শৈশব থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মানবদরদি কিন্তু অধিকার আদায়ে আপসহীন। চল্লিশের দশকে এই তরুণ ছাত্রনেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী’র সংস্পর্শে এসে সক্রিয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৪৮ সালে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’, ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৫৮ এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬৬ এর ৬-দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০ এর নির্বাচনসহ বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। এজন্য তাঁকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। সহ্য করতে হয়েছে অমানুষিক নির্যাতন। কিন্তু বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে তিনি কখনও শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে আপস করেননি। বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বাঙালির আবেগ ও আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন‍,‍‍ “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’’, যা ছিল মূলত স্বাধীনতার ডাক।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুর আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি ভাষণে বলেন, ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ চালালে ২৬শে মার্চ ১৯৭১ জাতির পিতা ঘোষণা করেন বাঙালি জাতির বহুকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ ন’মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। একটি ভাষণ কীভাবে গোটা জাতিকে জাগিয়ে তোলে, স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উসাহিত করে, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ তার অনন্য উদাহরণ। ইউনেস্কো ২০১৭ সালের ৩০শে অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে WorldsDocumentaryHeritage-এর মর্যাদা দিয়ে MemoryoftheWorldInternationalRegister-এ অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ ভাষণের কারণে বিশ্বখ্যাত নিউজউইক ম্যাগাজিন ১৯৭১ সালের ৫ই এপ্রিল সংখ্যায় বঙ্গবন্ধুকে ‘Poet of Politics’ হিসেবে অভিহিত করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি অবস্থায় শাসকগোষ্ঠী তাঁকে ফাঁসির হুকুম দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আমি তাদের কাছ নতি স্বীকার করবো না। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলবো, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা”। দেশ ও জনগণের প্রতি তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য বাংলা, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু আজ এক ও অভিন্ন সত্তায় পরিণত হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতার পর পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে জাতির পিতা ১০ই জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতির পুনর্গঠনে তিনি সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। মিত্রবাহিনীর সদস্যদের দেশে প্রত্যাবর্তন, স্বল্পসময়ের মধ্যে দেশের সংবিধান রচনা, জনগণের মৌলিক অধিকার পূরণ, সকল স্তরে দুর্নীতি নির্মূল, কৃষি বিপ্লব, কল-কারখানাকে রাষ্ট্রীয়করণসহ দেশকে ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তোলার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি।

মো. আবদুল হামিদ আশা প্রকাশ করে বলেন, রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু ছিলেন নীতি ও আদর্শের প্রতীক। বঙ্গবন্ধু রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ সহ তাঁর ওপর লিখিত গ্রন্থ অধ্যয়ন করে নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানতে পারবে এবং তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আগামীতে জাতিগঠনে অবদান রাখতে সক্ষম হবে। বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তাঁর আদর্শ আমাদের চিরন্তন প্রেরণার উস। তাঁর নীতি ও আদর্শ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়ুক, গড়ে উঠুক সাহসী, ত্যাগী ও আদর্শবাদী নেতৃত্ব – এ প্রত্যাশা করি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করাই হোক মুজিববর্ষে সকলের অঙ্গীকার।

করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ও অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাস এর সংক্রমণ মহামারি আকার ধারণ করেছে। এ রোগের বিস্তৃতি ঠেকাতে সরকার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের সকলের সচেতনতা একান্ত প্রয়োজন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আইইডিসিআর প্রতিনিয়ত দেশবাসীকে সচেতন করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদান করছে। স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমি দেশবাসীকে এগুলো মেনে চলার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

Related posts