
এসবিনিউজ ডেস্ক: ২০১৪ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রে সরকার গঠন করেছিল মোদী সরকার। সেই মোদী ম্যানিয়া কী এখনও আছে? ২০১৯ সালের শুরুতে জাতীয় রাজনীতির ময়দানে এটাই সবথেকে বড় প্রশ্ন। সম্প্রতী পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফল অবশ্য সবুজ সংকেত দিচ্ছে না পদ্ম শিবিরকে। তবে বিভিন্ন সংস্থার চালানো সমীক্ষা অনুযায়ী এত সহজে বসে যাবে না মোদীর রথের চাকা। শরিকদের সমর্থন নিয়ে হলেও ২০১৯ সালে ফের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন মোদী। তবে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না।
ফেডারেল ফ্রন্ট
মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে ফেডারেল ফ্রন্টের গল্প। কারণ মোদীকে হারাতেই ফেডারেল ফ্রন্ট গঠনের পরিকল্পনা করেছে বিরোধী শিবির। নিজেদের যাবতীয় বিভেদ ভুলে সবাই এক হয়েছে পরাক্রমশালী নরেন্দ্র মোদীকে হারাতে। গত মে মাসে কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে এই ফ্রন্টের বিষয়টি জোরাল হয়েছিল। ওই রাজ্যের জোট সরকারের শপথের অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন প্রায় সকল অবিজিপি দলের শীর্ষ নেতারা। সেই তালিকায় সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে ছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যুযুধান সব পক্ষের নেতারা মঞ্চ ভাগ করে দেশে গেরুয়া উত্থান ঠেকাবার ডাক দিয়েছিলেন। সেই ফ্রন্ট ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কতটা ফলপ্রসু হবে সেটা ২০১৯ সালের জাতীয় রাজনীতির একটা বড় কৌতুহলের বিষয়।
প্রধানমন্ত্রী রাহুল গান্ধী
বিরোধী ঐক্যের ফেডারেল ফ্রন্টের ডাকে সাড়া দিয়েছিল কংগ্রেস। মোদীকে হারাতে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তেও রাজি ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। কিন্তু মাস পাঁচেকের মধ্যে বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি। বিজেপি শাসিত তিন রাজ্যে ক্ষমতা দখল করেছে কংগ্রেস। যার মধ্যে দুই রাজ্যে গত দেড় দশক ধরে ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। এই অবস্থায় বিজেপিকে হঠাতে পারলে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রথম দাবিদার হয়ে উঠছে কংগ্রেস। মোদী ফেডারেল ফ্রন্টের মধ্যেও কংগ্রেসই হয়ে উঠতে পারে নিয়ন্ত্রক। তেমন কিছু ঘটলে ফের গান্ধী গান্ধী পরিবারের সদস্য প্রধানমন্ত্রী হতেই পারেন।
অযোধ্যায় রাম মন্দির
ভগবান রাম এখন আর ধর্মীয় বিষয় নয়। তিনি এখন ভারতের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক ইস্যু। পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকেও অযোধ্যায় রাম মন্দির গড়তে পারেনি রাম ভক্ত বিজেপি। এই অবস্থায় শরিকদের মধ্যে থেকেই শুরু হয়েছে বিদ্রোহ। রাম মন্দির না হলে মোদী সরকারের পতনের ইঙ্গিত দিয়েছেন অনেকে। এই অবস্থায় জোরাল হয়েছে অর্ডিন্যান্স এনে মন্দিরের দাবি। বিষয়টি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। জানুয়ারি মাসের চার তারিখ থেকে তা নিয়ে শুরু হবে শুনানি। তবে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের বড় ইস্যু হতে চলেছে অযোধ্যার রাম মন্দির।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিল
নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত দেশ ভারতের অন্যতম বড় একটি সমস্যা হচ্ছে বিপুল জনসংখ্যা। এই জনসংখ্যার চাপ পরছে অর্থনীতির উপরে। মানুষের সামাজিক জীবনেও পরছে জনসংখ্যার চাপের প্রভাব। এই প্রতিকূলতা সৃষ্টির কারণ কেবলমাত্র অনুপ্রবেশ নয়। তা অনুধাবন করেই রাষ্ট্রপতির কাছে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিলের খসড়া পাঠিয়েছেন একদল বিজেপি সাংসদ। দেশের সাংবিধানিক প্রধান এখনও সেই বিলের বিষয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত জানাননি। ২০১৯ সালে বিষয়টি নিয়ে আইনসভায় আলচনা শুরু হওয়ার কথা। যে দলই সরকার গঠন করুক না কেন, এই বিল নিয়ে ২০১৯ সালে চর্চা হবে দেশ জুড়ে।
বড় মূর্তি
গুজরাতে উদ্বোধন হয়েছে বিশ্বের সবথেকে বড় মূর্তির। লৌহমানবের সেই মূর্তিকে ছাড়িয়ে যাবে মহারাষ্ট্রের শিবাজির মূর্তি। এই দুই মূর্তির অর্থনৈতিক গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে অনেক রাজ্যের সরকারই নিজেদের রাজ্যে মূর্তি স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে। তালিকায় রয়েছে কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ, বিহারের মতো রাজ্য। পর্যটন এবং অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে দেশের আরও অনেক জায়গায় মূর্তি নির্মাণের ঘোষণার কথা শোনা যেতে পারে ২০১৯ সালে।
নাগরিকপঞ্জি তালিকা
২০১৮ সালের শুরুর দিন অসমের নাগরিকপঞ্জির তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল। সেটা ছিল প্রথম খসড়া। মাস ছয়েক পরে দ্বিতীয় তথা চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশিত হয়। যেখানে ৪০ লক্ষ মানুষের নাম ছিল না। যাদের মধ্যে অনেকেই বাঙালি। এই নিয়ে হয়েছিল তীব্র বিতর্ক। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে অসমের নাগরিকপঞ্জির তালিকা চূড়ান্ত করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। নাগরিকপঞ্জি জাতীয় রাজনীতির আলোচনায় নিজের স্থান পাকা করে নিতে সক্ষম হয়েছে। চূড়ান্ত তালিকা যেমনই হোক না কেন অসমের নাগরিকপঞ্জির তালিকা নিতে ফের বড় বিতর্ক হতে চলেছে ২০১৯ সালে।