বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০২৩ ❙ ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

পাটকল শ্রমিকদের পুলিশ বক্স ভাংচুর

স্টাফ রিপোর্টার: খুলনায় পুলিশের সাথে শ্রমিকদের সংর্ঘষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলে ৭২ ঘন্টা ধর্মঘটে ও ৪ ঘন্টা রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচী পালিত হয়েছে। এ সময় বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা পাবলা পুলিশ বক্স ভাংচুর করে। আন্দোলনরত শ্রমিকদের ইট পাটকেল নিক্ষেপে ২ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। বৃহস্পতিবার (৪এপ্রিল) ভোর ৬টায় মিলের উৎপাদন বন্ধ করে পাটকলের প্রায় অর্ধলাখ শ্রমিক আন্দোলনের শেষ দিনে রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচীতে অংশ নেয়।
পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ, বকেয়া মজুরী-বেতন পরিশ্ধো, মজুরী কমিশন কার্যকর ও প্রতি সপ্তাহর মজুরী প্রতি সপ্তাহে প্রদানসহ ৯ দফা দাবিতে পাটকল শ্রমিকরা এ কর্মসূচি পালন করছে।
কর্মসূচির শেষ দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, দৌলতপুর, খালিশপুর, দিঘলিয়া, আলীম, ইর্ষ্টাণ, কার্পেটিং ও জেজেআই জুট মিলের শ্রমিকরা নিজ নিজ কর্মস্থলে না যেয়ে স্ব স্ব মিল গেটে সমবেত হয়। সেখানে শ্রমিকরা পৃথক পৃথক ভাবে মূল ফটকের সামনে ধর্মঘট শুরু করে। পরে সকাল ৮টায় বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নতুন রাস্তা মোড়, আটরা আলীম গেট ও নওয়াপাড়া রাজঘাট এলাকার খুলনা-যশোর মহাসড়কে অবস্থান করে। পাওনার দাবিতে শ্রমিকরা মহাসড়ক ও রেললাইনের উপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় আন্দোলনকারীরা মহাসড়কের সকল যান ও রেললাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে। শ্রমিকরা দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজপথ রেলপথ অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। সকাল সাড়ে ১০টায় শ্রমিকদের রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় কিছু উশৃংখল শ্রমিকরা পাবলা পুলিশ বক্সে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। আন্দোলনকারীরা পুলিশ বক্সের দরজা, জানালা ভাংচুর করে। শ্রমিকদের ইট-পাটকেল নিক্ষেপে ২ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ৯ দফা দাবিতে নতুন রাস্তা মোড়ে খুলনা-যশোর মহাসড়কে শান্তিপূর্নভাবে শ্রমিকদের কর্মসূচি চলছিল। হঠাৎ করে কিছু উশৃংখল শ্রমিক পুলিশ বক্সে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা এগিয়ে গেলে শ্রমিকরা পুলিশে উপরও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে ২ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। এ ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে নতুন রাস্তা, আটরা ও নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম দূর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা।
অবরোধ চলাকালে নতুন রাস্তা, আটরা ও নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার সমাবেশের আয়োজন করে শ্রমিক নেতারা। খালিশপুর নতুন রাস্তা মোড়ের সমাবেশ সভাপতিত্ব করেন পাটকল শ্রমিকলীগের খুলনা-যশোর অঞ্চলের আহবায়ক ও ক্রিসেন্ট জুট মিল সিবিএ’র সভাপতি মোঃ মুরাদ হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন পাটকল শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সরদার মোতাহার উদ্দীন। সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন শ্রমিক নেতা মোঃ সোহরাব হোসেন, সাহানা শারমিন, হুমায়ুন কবির খান, মোহাম্মদ দ্বীন ইসলাম, আবু দাউদ দ্বীন মোহাম্মদ, শেখ মোঃ ইব্রাহীম, মোঃ বেল্লাল মল্লিক, আঃ মান্নান, পাটকল শ্রমিকলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান, সেলিম আকন, কাওসার আলী মৃধা, খলিলুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম শিকদার, আবু জাফর, এস এম আজম, আবু হানিফ, আব্দুল মজিদ বকুল, মোঃ সেলিম শিকদার, সরদার আলী আহম্মেদ, মোঃ সাহিদুল ইসলাম সাহিদ, আইয়ুব আলী, বেলায়েত হোসেন ও আবু হানিফ।
আটরা শিল্প এলাকার শ্রমিক সমাবেশ সভাপতিত্ব করেন আলীম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম লিঠু। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আলীম সিবিএ’র শ্রমিক নেতা আঃ হামিদ সরদার, সভাপতি মোঃ আলাউদ্দীন, সাধারন সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন,আঃ সালাম, আঃ রশীদ, মুজিবর রহমান, মকবুল হোসেন, তবিবর রহমান, আলমগীর হোসেন, সিরাজুল ইসলাম লিয়াকত হোসেন। নওয়াপাড়া শিল্প এলকার রাজঘাটের শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাটকল শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক এস এম কামরুজ্জামান, মোঃ মজিবর রহমান, জাহিদুল ইসলাম ।
শ্রমিকদের রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শেষে পাটকল শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সরদার মোতাহার উদ্দীন বলেন, ২৬ টি পাটকলে ৯ থেকে ১০ সপ্তাহ শ্রমিকরা মজুরী না পাওয়ায় অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। সন্তানদের লেখা পড়া বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়েছে। অর্থাভাবে অনেক শ্রমিক পরিবার বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। ৬ এপ্রিল শনিবারের মধ্যে ৯ দফা দাবি বাস্থাবায়ন না হলে, ৭ এপ্রিল আলোচনা সভায় লাগাতার মিল ধর্মঘট ও রাজপথ-রেলপথ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

Related posts