
এসবিনিউজ ডেস্ক: করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে যখন সবাই ঘরবন্দি হয়েছেন তখনও অনলাইনে সরকারি-বেসরকারি কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে, আদালত বন্ধ থাকলেও চলেছে বিচারকাজ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনও না খুললেও বন্ধ হয়নি লেখাপড়া; এর সবই সম্ভব হয়েছে তথ্য-প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার কারণে।
বিরূপ এই সময়ে বাংলাদেশের এই অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় প্রশ্ন করেছেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ না হলে এখন কী পরিস্থিতির মধ্যে দেশবাসীকে পড়ত হত।
তিনি বলেন, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার অনুযায়ী গত ১২ বছরে আওয়ামী লীগ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর রূপকল্প বাস্তবায়ন করে বর্তমানে যে অবস্থায় নিয়ে এসেছে তারই সুফল মহামারীকালে পাচ্ছে দেশবাসী।
শুক্রবার রাতে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার ১২ বছর’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
সজীব ওয়াজেদ বলেন, “এই যে ভিন্ন ধরনের একটা বছরে আমরা বাস করছি। এই ২০২০ সালের শুরুতেই বলতে হয় মহামারীর কাহিনী। আজ যদি ডিজিটাল বাংলাদেশ না থাকত আমাদের কী অবস্থা হত?
“আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার, আইসিটি ডিভিশন অনলাইন কাজ করার প্রস্তুতি এই গত ১২ বছর ধরে নিচ্ছি। শুধু মহামারী যে হবে, এটা তো কেউ জানত না। আমাদের স্বপ্ন ছিল, বাংলাদেশে সম্পূর্ণভাবে আমরা ডিজিটাইজড হব।”
গত মার্চে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয় বাংলাদেশেও। এরপর সংক্রমণ রোধে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলে লকডাউন।
এই সময় অর্থনৈতিক, বিচারিকসহ নানা কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি শিক্ষার কাজটি চলছে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। এমনকি দৈনন্দিন কেনাকাটার মতো নৈমিত্তিক কাজগুলোও অনলাইনে সেরেছেন নাগরিকরা।
সেই কথা তুলে ধরে সজীব ওয়াজেদ বলেন, “আমরা ৪০ হাজারের উপর মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম বানিয়েছি। আমরা আমাদের সরকারি কার্যক্রম যাতে অনলাইন সিস্টেমে চলে যায়, তার জন্য আমরা একটা ই-নথি সিস্টেম আবিষ্কার করেছি।
“আমরা ২০ হাজারের উপর সরকারি অফিসকে কানেকশন দিয়েছি। যখন এই মহামারী আরম্ভ হয়, দুই মাসের মধ্যে আমাদের দেশকে বন্ধ করে দিতে হয়। তবে আমাদের সরকারি কার্যক্রম কিন্তু থামে নাই। তখন আমরা সম্পূর্ণ ই-নথিতে চলে যাই। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে চলে যাই।
“এই যে ডিজিটাল সিস্টেম আমরা করেছি, তাতে আমাদের দেশ চলতে থাকে। কোনো বাধা পড়ে না। ই-জুডিশিয়ারি সিস্টেমের কার্যক্রমও অতি শিগগিরই সম্পন্ন করা হয়, যাতে আদালতের কার্যক্রমও থেমে যায় না।”
এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সজীব ওয়াজেদ সে দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে এগিয়ে রাখেন বাংলাদেশকে।
তিনি বলেন, “আমি যে দেশে আছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র… তারা এখন আবার লকডাউনে সব বন্ধ করে দিচ্ছে, কারণ কোভিড এখনও বাড়ছে এখানে। এ দেশে, বিশ্বের সব থেকে ধনী দেশে আড়াই লাখের উপর মানুষ প্রাণ হারিয়েছে কোভিডে, কল্পনা করা যায় না। সেখানে বাংলাদেশে মাত্র ৬ হাজার। ৬ হাজার প্রাণ যে হারানো হয়েছে, এটাও দুঃখের বিষয়। আমরা তাও চাই না।
“তবে এই তুলনাটা করে দেখেন। যারা মনে করে, আমরা একটা দরিদ্র দেশ, আমরা কিন্তু দরিদ্র দেশ না। আমরা কী পর্যায়ে এগিয়ে আছি, এ রকম মহামারীর মধ্যে।”
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবির এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে সজীব ওয়াজেদ বলেন, “পরিসংখ্যানে শেষমেষ দেখা যাচ্ছে, দুদিন আগে যে সংখ্যা দিয়েছে, আমাদের অর্থনীতি মহামারীর মধ্যেও ৭ শতাংশ বেড়েছে। সেখানে যদি তুলনা করেন ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এদের অর্থনীতি ১০ শতাংশ কমে গেছে। সেখানে বাংলাদেশে ৭ শতাংশ আমরা এগিয়ে গেছি।”
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সজীব ওয়াজেদ।
তিনি বলেন, “এটা সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশের কারণে। এটা সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনায়। আমরা এমন কোনো ক্রাইসিস নাই, যেটা আমরা মোকাবেলা করতে পারি না। কারণ আমাদের সরকারের, আমাদের নেতৃত্বের, আমাদের দেশের মানুষের আত্মবিশ্বাস আছে, যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ আমরা মোকাবেলা করতে পারব।
“আমরা যে কোনো জিনিস, যেটা আমরা করতে চাই, সেটা আমরা বাস্তবায়ন করে ছাড়ব। আমরা নিজেরাই পারি, নিজেদের মেধায় পারি, নিজেদের পরিশ্রমে পারি, আমাদের কারও কাছে হাত পেতে থাকতে হয় না।”
দেশে এখন ‘প্রায় ১২-১৩ কোটি’ নাগরিক ইন্টারনেট ব্যবহার করছে বলে সভায় জানান সজীব ওয়াজেদ। তিনি বলেন, সাড়ে তিন হাজার ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক কেবল সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা বাড়ানো হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, “আগামী বছরের মধ্যে আমাদের স্বপ্ন হচ্ছে ফাইভ-জি চালু করা। আমরা ডিজিটালের ক্ষেত্রে কোনো দিকে পিছিয়ে নাই। আমরা মহাকাশ জয় করেছি, আমরা বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট পাঠিয়েছি, আমাদের দেশে টেলিকমিউনিকেশনের কানেকশন দিচ্ছে। এটা কিন্তু কেউ কল্পনা করতে পারে নাই। তবে এটার লাভটা কী? লাভটা তরুণরা বুঝছে।”
তরুণ-তরুণীরা নিজেরাই যেন কর্মসংস্থানের পথ খুঁজে নিতে পারে তার জন্য সরকার সচেষ্ট রয়েছে বলে জানান সজীব ওয়াজেদ।
তিনি বলেন, “তরুণ-তরুণীদের আরও একটি কথা বলতে চাই- আমাদের কাছে তারা সব সময় দাবি করে কর্মসংস্থান। কর্মসংস্থান শুধু তোমাদের করে দিচ্ছি না, তোমাদের নিজেদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার সুযোগ করে দিয়েছি।
“আজকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় পজিশনে আছে ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষেত্রে। আজকে আইসিটির ৪১টি হাই টেক পার্ক করেছি, সেখানে আমাদের দেশি কোম্পানিগুলো গত বছর ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি কামাই করেছে। আমরা কিন্তু প্রত্যেক বছর হাজার হাজার তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি আইসিটি বিভাগ থেকে। গত ৭-৮ বছর ধরে করে যাচ্ছি। গ্রামে বসে কিন্তু একটা ছেলে অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং করে মার্কিন ডলার কামাই করছে। সে টাকা পেইপাল, জুম মাধ্যমে মিনিটে পৌঁছে যাচ্ছে। ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে তাদের জন্য সমস্যা না হয় সেজন্য তাদের ফ্রিল্যান্সিং কার্ডও করে দিয়েছি।”
সজীব ওয়াজেদ বলেন, আগামী চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পথে বাংলাদেশ ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি খাতে নতুন কিছু আবিষ্কার করবে, তারা নেতৃত্ব দেবে- এটাই তার স্বপ্ন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস, মাইক্রোপ্রসেসর এই খাতগুলোতে নতুন কিছু আবিষ্কার করবে বাংলাদেশ- এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।
একসেস টু ইনফরমেশন-এটুআই প্রকল্পের পলিসি অ্যাডভাইজার আনির চৌধুরীর সঞ্চালনায় এই ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বক্তব্য দেন আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম।