
স্টাফ রিপোর্টার: ঘূর্ণিঝড় ফণী আতঙ্কের কারণে খুলনার উপকূলীয় এলাকার তিন লক্ষাধিক মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে। শুক্রবার (৩ মে) সকাল ১০টার পর থেকেই জেলার উপকূলীয় উপজেলা দাকোপ, কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলার সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন এলাকার মানুষ সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে যাওয়া শুরু করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩২৫টি সাইক্লোন শেল্টার মানুষে মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
খুলনার জেলা প্রশাসক মো. হেলাল হোসেন জানান, খুলনার উপকূলীয় এলাকায় ছয় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এরমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৩ লাখ মানুষকে সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে আসা হবে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
এদিকে, উপকূলীয় অঞ্চলে বিপদ সংকেতের লাল পতাকা লাগানো হয়েছে। সবাইকে সতর্ক করতে মাইকিং করা হয়েছে। দুপুর দেড়টা থেকে দমকা বাতাসের সঙ্গে খুলনায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। এতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দুপুর থেকে খুলনার আকাশ রয়েছে মেঘলা।
ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের হোগলা, কয়রা ইউনিয়নের গোবরা, ঘাটাখালী, হরিণখোলা, উত্তর বেদকাশীর গাজীপাড়া, বিনাপানি, গাব্বুনিয়া, দক্ষিণ বেদকাশির জোড়শিং, চোরামুখা, আংটিহারা, গোলখালী, খাশিটানা, মহেশ্বরীপুরের সরদারঘাট, পাইকগাছা উপজেলার শিবসা পাড়ের গড়ইখালী ইউনিয়নের গড়ইখালী, দাকোপের বাণিশান্তা, বাজুয়া, কামারখোলা, সুতারখালী, কালাবগী, নলিয়ান, জেলেখালী, জয়নগর, গুনারী এবং বটিয়াঘাটা উপজেলার শিয়ালীডাঙ্গা এলাকা।
শেল্টারগুলোতে মজুদ করা হচ্ছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা করছে।
দাকোপের বিভিন্ন নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২/৩ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশুদ্ধ পানি বহনকারী ভ্যানচালক করিম মিয়া বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন থেকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকার মানুষের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঝড়ের পরে যাতে সবাই বিশুদ্ধ পানি পায়, সেজন্য আমি আশ্রয়কেন্দ্রে পানি নিয়ে যাচ্ছি।’
জেলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সদস্য, ত্রাণ শাখার প্রধান সহকারী শাহানা বেগম দুপুরে এ প্রতিবেদককে বলেন, খুলনার কয়রা উপজেলার ১১৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৫০ হাজারটি পরিবার, দাকোপ উপজেলার ৯৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৫০ হাজারটি পরিবার এবং পাইকগাছা উপজেলার ৩৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১০ হাজার ও বটিয়াঘাটা উপজেলার ২০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১ হাজার পরিবারকে নেওয়া সম্ভব হয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি এবং নয়টি উপজেলায় নয়টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনকে সতর্ক করতে উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে মাইকিং করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দিতে ১১৪ টি মেডিকেল টিমও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।