বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০২৩ ❙ ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

খুলনার কাঁকড়া যাচ্ছে ২৯ দেশে

স্টাফ রিপোর্টার: বৃহত্তর খুলনায় বাগদা ও গলদার পাশাপাশি উৎপাদিত কাঁকড়া রফতানীর তালিকায় নতুন নতুন দেশ যুক্ত হচ্ছে। তিন বছর আগে যেখানে ১৯ দেশে কাঁকড়া রফতানী হতো। এখন সেখানে রফতানী হচ্ছে ২৯টি দেশে। এরফলে কাঁকড়া খাত থেকে রফতানী আয় দ্বিগুণ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ২৯১ কোটি ৭২ লাখ ২০ টাকা মূল্যের জীবন্ত ও হিমায়িত কাঁকড়া বিদেশে রফতানী হয়েছে। এদিকে কাঁকড়া রফতানী বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে খুচরা ও পাইকারী বেচাকেনার জন্য কাঁকড়ার ডিপো।
মৎস্য বিভাগের সূত্র জানান, আইলা নামক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চিংড়ি চাষীরা ঋণি হয়ে পড়ে। পূঁজি হারায় চাষীরা। এছাড়া প্রতিবছর মড়ক, অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির কারণে উপকূলের চাষীরা বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে গলদা ও বাগদা চাষীরা ন্যায্য মূল্য পায়নি। গত বর্ষা মৌসুমে কাংক্ষিত বৃষ্টি না হওয়ায় গলদা চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লোকসান কাটিয়ে উঠতে খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, বাগেরহাটের মোংলা, রামপাল ও সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলার চিংড়ি চাষীরা কাঁকড়া চাষে ঝুঁকে পড়েছে। শ্যামনগর ও ডুমুরিয়া উপজেলায় খাঁচায় কাঁকড়া চাষ হচ্ছে। মোটা তাজাকরণ পদ্ধতির এই কাঁকড়া জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রতিটি গড়ে ৪শ’ গ্রাম ওজনের হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে মৌসুমে প্রতি কেজি কাঁকড়া ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো খুলনার সহকারী পরিচালক মোঃ শফিকুল হাসান জানান, চলতি অর্থবছরে প্রথম ৬ মাসে এ অঞ্চল থেকে ২৯১ কোটি ৭২ লাখ ২০ টাকা মূল্যের জীবন্ত ও হিমায়িত কাঁকড়া বিদেশে রফতানী হয়। গত অর্থবছরে ১৪৭ কোটি ৭০ লাখ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৫৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা মূল্যের কাঁকড়া বিদেশে রফতানী হয়। ৪০টি প্রতিষ্ঠান কাঁকড়া রফতানী করে।
রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ অঞ্চলে উৎপাদিত কাঁকড়া সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, এ্যালবেনিয়া, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, সাইপ্রাস, বুলগেরিয়া, ইজিপট, ফিনল্যান্ড, চিলি, যুক্তরাজ্য, সাউথ আফ্রিকা, ভিয়েতনাম, পোল্যান্ড, নরওয়ে, মেক্সিকো, লেবানন, সেনেগাল, ভারত, তুর্কি ও সুইডেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আবু ছাইদ জানান, গত অর্থবছরে ২৬ হাজার ৭৯১ হেক্টর জমিতে ৮ হাজার মেট্রিক টন কাঁকড়া উৎপাদিত হয়। বাগদা ও গলদা চিংড়িতে লোকসান কাটিয়ে উঠতে চাষীরা স্বল্প পূঁজি ব্যয় করে কাঁকড়া চাষ সম্প্রসারণ করেছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সরোজ কুমরি মিস্ত্রি জানান, প্রায় দুইশ’ চাষী আটলিয়া, মাগুরখালি, শোভনা ও সাহস ইউনিয়নে কাঁকড়ার চাষ করছে। উৎপাদন বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে।
পাইকগাছা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাস জানান, কেনাবেচার সুবিধার্থে উপজেলা সদর, কপিলমুনি, চাঁদখালী, গড়ইখালী ও বাঁকায় কাঁকড়ার ডিপো গড়ে উঠেছে। এখানে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে।
শ্যামনগর উপজেলার কলবাড়ী গ্রামের চাষী সাদ্দাম হোসেন জানান, সুন্দরবনে কাঁকড়ার পোনা ধরা নিষিদ্ধ হওয়ায় চাষীরা পাশ্ববর্তী নদী থেকে ছোট কাঁকড়া সংগ্রহ করে আবাদ করছে। গ্রেড (সাইজ) অনুযায়ী মৌসুমে কাঁকড়ার বাজার চাঙ্গা থাকে। মড়ক কম হওয়ার কারণে চাষী লাভবান হচ্ছে।

Related posts