কেডিএ সেবার পরিবর্তে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে: সাইফুল

স্টাফ রিপোর্টার: খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) প্লট বরাদ্দ, হস্তান্তর ফি ও ফরমের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় নগরবাসী নাজেহাল হয়ে পড়েছে। কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে বাড়ি করার অধিকার থেকে শ্রমজীবী, কর্মজীবী মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। কেডিএ কর্তৃক বিভিন্ন খালের ওপর রাস্তা তৈরি করায় নগরীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। সেবার পরিবর্তে কেডিএ এখন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
বুধবার (১০এপ্রিল) খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত নাগরিক সমাজ, খুলনার আহবায়ক অ্যাডভোকেট মো. সাইফুল ইসলাম এ অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি কেডিএ কর্তৃক সেবার নামে হয়রানির প্রতিবাদে আগামী শনিবার নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালনের জন্য নগরবাসীর প্রতি আহবান জানান। এছাড়া আগামী ১৫ এপ্রিল জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও পূর্তমন্ত্রীর নিকট এবং একই দিন আলাদা আলাদাভাবে কেসিসি মেয়র ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, খুলনাবাসী কেডিএ’র নানামুখী হয়রানিতে নাজেহাল হয়ে পড়েছে। চাকরিজীবী মানুষেরা পেনশনের টাকা দিয়ে, ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ঋণসহ নানাভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে নিজের একটি ঠিকানা ‘বাড়ি’ করতে চায়। সেক্ষেত্রে কেডিএ’র অনুমোদন প্রয়োজন হয়। কিন্তু দু:খজনক ব্যাপার হচ্ছে, গত কয়েকমাস ধরে কেডিএ ২০ফুট রাস্তা না থাকলে বাড়ি তৈরির নকশার অনুমোদন দিচ্ছে না। হঠাৎ করে ১২ ফুটের জায়গা থেকে ২০ফুট বৃদ্ধি করায় সিংহভাগ মানুষের পক্ষে কেডিএ’র অনুমোদন পাওয়া সম্ভব না। আশির দশকে কেডিএ ৬ফুট রাস্তায় শত শত বাড়ির অনুমোদন দিয়েছে। পরবর্তীতে ৯০ দশক থেকে মানুষ ১২ ফুট রাস্তা থাকলেই কেডিএ থেকে অনুমোদন পেয়ে আসছে। কিন্তু হঠাৎ করে ২০ফুট চালু করায় মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছে। বর্তমানে শত শত মানুষের ফাইলগুলো নকশার অনুমোদনের অপেক্ষায় কেডিএতে বন্দি অবস্থায় রয়েছে।
তিনি বলেন, শুধু নকশা অনুমোদন নিয়েই জটিলতা নয়। প্লট হস্তান্তরের ক্ষেত্রেও মানুষ বিপাকে পড়েছে। আগে যেখানে সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার প্রথম ও দ্বিতীয় ফেজে কেডিএ’র প্লট হস্তান্তর করতে ব্যয় হত ২লাখ ৬৫ হাজার টাকা বর্তমানে সেখানে ধরা হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। একই ভাবে নিরালা ও এম এ বারী সড়কে আড়াই লাখ টাকা থেকে প্লট হস্তান্তরের টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে ২০ লাখ টাকা থেকে ৩৫ লাখ টাকা। এছাড়া খালি জমি ১০ শতাংশ, বাণিজ্যিক ১৫ শতাংশ, ভ্যাট ১ দশমিক ৫ শতাংশ, ভবন থাকলে ৫ শতাংশ, বাণিজ্যিক ৫ শতাংশ ও ভ্যাট ১ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ফরমের মূল্য দুই-তিনগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০০৯ সালে নতুন সেবা ফি চালু করেছে। আবাসিক এলাকায় ৫-৬ কাঠা জমির ফরমের মূল্য ৪-৬ হাজার টাকার সাথে ১৫ শতাংশ ভ্যাট, বাণিজ্যিক এলাকায় ৫-৬ কাঠা জমির ফরমের মূল্য ৭ হাজার টাকা সাথে ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ক্ষুদ্র শিল্প এলাকায় ৫-৬ কাঠা জমির ফরমের মূল্য ২০ হাজার টাকা সাথে ১৫ শতাংশ ভ্যাট, বৃহৎ শিল্প ৫-৬ কাঠা জমির ফরমের মূল্য ৬০ হাজার টাকা সাথে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উল্লেখ করা হয়, কেডিএ নিউমার্কেট দোকান মালিকদের সাথে চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২-৩ গুণ ভাড়া বৃদ্ধির নোটিশ দিয়েছে। এখানকার দোকান মালিকদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের চুক্তির ২০২৫ সাল পর্যন্ত। এখানেও বড় অনিয়ম হয়েছে। সেবা বলতে খুলনার মানুষ কিছুই কেডিএ’র কাছ থেকে পাচ্ছে না। সোনাডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ড থেকে জয় বাংলার মোড় পর্যন্ত রাস্তাটির দুর্দশার শেষ নেই। রূপসা মোড় থেকে পীর খানজাহান আলী (রহ. ) সেতু পর্যন্ত ৪ লেনের কাজ ছয় বছর ঝুলে আছে। এখন এ রাস্তা নির্মাণ করতে গেলে সরকারের অতিরিক্ত ৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। তাছাড়া এনওসি/ প্লান পাসের ফি’ও আগের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে সেবার পরিবর্তে কেডিএ এখন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। খুলনার মানুষ কেডিএ’র হয়রানির হাত থেকে পরিত্রাণ চায়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নাগরিক নেতা শ্যামল সিংহ রায়, মিজানুর রহমান বাবু, কাউন্সিলর ফকির সাইফুল ইসলাম, মিনা আজিজুর রহমান, এ এইচ শাহাদাৎ প্রমুখ।

Related posts