এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না গোলপাতা আরহণে

স্টাফ রিপোর্টার: সুন্দরবনে চলতি গোলপাতা আরহণ মৌসুমে তেমন সাড়া মিলছে না বাওয়ালীদের। বনবিভাগের কড়াকড়ি আরোপ ও তুলনামুলকভাবে গোলপাতার চেয়ে টিনের দাম কম হওয়াতে দিনকে দিন এর ব্যবহার কমছে। তারপরও জীবিকার তাগিদে পুরানো পেশা টিকিয়ে রাখতে ও নিতান্তই দরিদ্র মানুুষের চাহিদা মিটাতে সংশ্লিষ্ট মহাজন-বাওয়ালীরা তাদের ব্যবসা ধরে রেখেছেন।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: মাহমুদুল হাসান ও চাদপাই রেঞ্জ’র সহকারী বন সংরক্ষক মো: শাহিন কবির জানান, পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে শরণখোলা, চাদপাই ও শ্যালা নামক তিনটি গোলপাতা কুপ রয়েছে। এরমধ্যে অভয়ারণ্য ঘোষিত শরণখোলা গোলপাতা কুপে গত তিন বছর ধরে গোলপাতা আহরণ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। শরণখোলার ৯৫ভাগ এলাকাই অভয়ারণ্য হওয়ায় সেখানে মাছ ও গোলপাতাসহ সকল ধরণের বনজ সম্পদ আহরণে সরকারের পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে শুধু শ্যালা কুপের পাতা আহরণের জন্য পাস দেয়া হচ্ছে। এ কুপের আহরণ শেষ হওয়ার পর চাদপাই কুপের পাস দেয়া হবে। এ পর্যন্ত শ্যালা কুপে ৪১টি নৌকার পাস দেয়া হয়েছে। যারা প্রতিদিন সেখান থেকে পাস অনুযায়ী নৌকা প্রতি ৫শ’ মণ গোলপাতা কেটে বোঝাই করছেন। বনবিভাগের হিসেব মতে গত মৌসুমে এই দ্ইু কুপ থেকে প্রায় ৪০ হাজার মণ গোলপাতা আহরণ হয়েছিল। এবারও বনবিভাগের আহরণ লক্ষ্যমাত্রা ৪০ হাজার মণেই রয়েছে।
মুলত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সুন্দরবনে গোলপাতা আহরণ মৌসুম। কিন্তু নানা কারণে চলতি মৌসুমে বাওয়ালীরা বেশ দেরিতেই শুরু করেছেন গোলপাতা কাটার কাজ।
মোংলা শহরের মাদ্রাসা রোডের গোলপাতা ব্যবসায়ী ইমন হোসেন বলেন, আগে গোলপাতা বহনকারী নৌকার দুই পাশে ঝুল (ভারসম্য) হিসেবে বনের বিভিন্ন ধরণের গাছ কেটে আনা হতো। কিন্তু এখন সেগুলো কাটা নিষিদ্ধ করায় দেশীয় গাছ নিয়ে ঝুল হিসেবে ব্যবহার করায় খরচও বাড়ছে ব্যবসায়ীদের। এসব কারণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় এখন মোংলা শহরে হাতে গোনা দুই একজন আড়ৎদার তাদের ব্যবসা ধরে রেখেছেন মাত্র।
চাদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: শাহিন কবির বলেন, আগে বড় বড় নৌকা নিয়ে এসে বাওয়ালীরা তাদের পাস পারমিট ছাড়া অতিরিক্ত গোলপাতা কেটে নিতেন। এতে তারা অধিক লাভবান হলেও বনবিভাগ প্রকৃত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হতো। যার ফলে গত বছর থেকে বড় নৌকা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ১৪ মিটার দৈঘ্যের নৌকার ব্যবহার ও বনের কোন ধরণের গাছ না কেটে দেশীয় গাছ/কাঠ দিয়ে নৌকার ঝুল ব্যবহারের কড়াকড়ি নিয়ম করায় বাওয়ালীদের সংখ্যা এবার কিছুটা কম দেখা যাচ্ছে।
এদিকে চলতি মৌসুমে গোলপাতা আহরণে বাওয়ালী/নৌকা কম হওয়ার কারণ হিসেবে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: মাহমুদুল হাসান বলেন, তুলনামুলকভাবে গোলপাতার চেয়ে টিনের দাম কম। দুই বছর পর গোলপাতা পাল্টাতে হয় আর টিনের ব্যবহার দীর্ঘস্থায়ী হওয়াটাই অন্যতম একটা কারণ। তিনি আরো বলেন, আগে ঘরবাড়ীতে গোলের ব্যবহার হতো, এখন উঠে গেছেই বললেই চলে। শুধুমাত্র উপকূলের দরিদ্র শ্রেণীর মানুষই এর ব্যবহার ধরে রেখেছেন। আর ধনীরা ব্যবহার করছেন চিংড়ি ঘেরগুলোর ঘরে।

Related posts