
প্রবীর বিশ্বাস: দক্ষিণাঞ্চলে বোতলজাত পানি সরবরাহের কোনো প্লান্ট না থাকায় খুলনাসহ আশেপাশের জেলায় যেসব বোতলজাত পানি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে তা কতটুকু বিশুদ্ধ তা নিয়ে যখন রীতিমতো প্রশ্নের জম্ম দেয় তখন এই অঞ্চলের মানুষের জন্য সুখবর নিয়ে আসছে খুলনা ওয়াসা। রাজধানী ঢাকার পর এবার বিশুদ্ধ পানি বোতলজাত করে বাজারে ছাড়তে যাচ্ছে তারা। বোতলজাত পানির নামকরণ করা হয়েছে ‘সুন্দরবন পিওর ড্রিংকিং ওয়াটার’। পানি বাজারজাত করার জন্য বোতল উৎপাদন, পানি পরিশোধন, বোতলে ভরা ও লেবেলসহ বিপননের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজও প্রায় শেষ। খুলনা ওয়াসা বলছে, আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে তাদের উৎপাদিত বোতলজাত পানি বাজারে পাওয়া যাবে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পানিতে যে লবণাক্ততার পরিমাণ কয়েকগুন বেশি তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সুপার সাইকেèান সিডর এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে’র ঘূর্ণিঝড় আইলা’র পর এ অঞ্চলের মানুষ এখনো সুপেয় পানির জন্য রীতিমতো হাহাকার করেন। এক কলসী সুপেয় পানি আনতে তাদেরকে পাড়ি দিতে হয় অনেক পথ। তাছাড়া গ্রীষ্ম শুরু হতে না হতেই পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়াসহ নানা কারণে এ অঞ্চলের মানুষ সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত দীর্ঘ সময় ধরে। উপকূলীয় অঞ্চলের অনেক মানুষ বৃষ্টির পানি জমা রেখে পান করে। সেটাও দেখা যায় শুকনা মৌসুমে কোন এক সময় শেষ হয়ে যায়। ফলে সুপেয় পানির জন্য এলাকাবাসীকে রিতিমতো যুদ্ধ করতে হয়।
এসব কিছুকে বিবেচনায় নিয়ে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় খুলনা মহানগরীর রায়ের মহলে ১৫ দশমিক ৩৭ কাঠার ওপর একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরির কাজ শুরু করে খুলনা ওয়াসা। সেখানে স্থাপিত হয়েছে বোতলজাত পানি তৈরির কারখানা। ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলন করে সেটি পরিশোধন করে বোতলে ভরা হবে। চুক্তি অনুযায়ী কারখানায় প্রতি ঘন্টায় আট হাজার লিটার পানি উৎপাদিত হবে। চাহিদা বাড়লে বাড়বে উৎপাদনও। ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে সমস্ত প্রস্তুতি।
খুলনা ওয়াসার প্রকল্প ব্যবস্থাপক খান সেলিম আহম্মদ বলেন, আকার ভেদে ৩০০ থেকে ৫০০ মিলি লিটার, এক থেকে পাঁচ লিটার বোতল ও ২০ লিটার জারে করে পানি বাজারজাত করবে ওয়াসা। প্রতিদিন মোট এক লাখ ৪৮ হাজার ৮৮০ বোতল পানি বোতলজাত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। কারখানায় বোতল উৎপাদন, পানি পরিশোধন ও প্যাকিজিংয়ের সব কাজ হবে অত্যাধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে। এছাড়া পানির শুনগত মান বজায় রাখতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
ওয়াসার পানি সরবরাহ প্রকল্পের পরিচালক কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, বোতলজাত পানি ‘সুন্দরবন পিওর ড্রিংকিং ওয়াটার’ বাজারজাত করতে ইতিমধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে পরিবেশক চাওয়া হয়েছে। খুলনা মহানগরীর সদর, সোনাডাঙ্গা, খালিশপুর ও দৌলতপুরে একজন করে পরিবেশক, খুলনা জেলার প্রতিটি উপজেলায় একজন এবং বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরাসহ বিভাগের প্রতিটি জেলায় এক জন করে পরিবেশক নির্ধারণের প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এ জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিও প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
খুলনা ওয়াসা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের উৎপাদিত পানি সাধারণ মানুষের নাগালের ভেতর যাতে থাকে তার জন্য মূল্যের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বোতলজাত পানি বাজারজাত করতে নতুন করে লোকও নিয়োগ দেয়া হবে। তিনি আরও জানান, তিনশ’ মিলিলিটার বোতলজাত পানির দাম ১০ টাকা, পাঁচশ’ মিলিলিটার বোতলজাত পানির দাম ১৫ টাকা, এক লিটারের দাম ২০ টাকা, দুই লিটারের দাম ৩০ টাকা, তিন লিটারের দাম ৪৮ টাকা, পাঁচ লিটারের দাম ৬৫ টাকা এবং ২০ লিটারের বড় জারের দাম মাত্র ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন এটা বিএসটিআই-এর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে, অনুমোদন পেলেই বাজারজাত শুরু করা হবে।