বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩ ❙ ৯ চৈত্র ১৪২৯

আজ মহান বিজয় দিবস

বিশেষ প্রতিনিধি: ‘পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে/ জ্বলন্ত ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে, নতুন নিশানা উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগি¦দিক/ এই বাংলায়/ তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা।’ প্রয়াত দেশের শ্রেষ্ঠ কবি শামসুর রাহমানের এই কবিতা একাত্তর সালের এই দিনে সত্যি হয়ে দেখা দিয়েছিল বাঙালীর জাতীয় জীবনে।
রক্ত নদী পেরিয়ে আসা আনন্দ-বেদনায় মিশ্র মহান বিজয় দিবস আজ। বিজয়ের গৌরবের- বাঁধভাঙ্গা আনন্দের দিন। একই সঙ্গে লাখো স্বজন হারানোর শোকে ব্যথাতুর-বিহ্বল হওয়ারও দিন। তীব্র শোষণের কুহেলী জাল ভেদ করে একাত্তরের এই দিনটিতে প্রভাতী সূর্যের আলোয় ঝিকিমিকিয়ে উঠেছিল বাংলার শিশির ভেজা মাটি, অবসান হয়েছিল পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর সাড়ে তেইশ বছরের নির্বিচার শোষণ, বঞ্চনা আর নির্যাতনের কালো অধ্যায়ের। নয় মাসের জঠর-যন্ত্রণা শেষে এদিন জন্ম নেয় একটি নতুন দেশ-স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। ঝড়ের ভেতরে বিকশিত অটল বৃক্ষের জীবন্ত প্রতীক স্বাধীনতা নামের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ আজও প্রচন্ড ঝাঁকি দেয় রক্তে, শাণিত করে চেতনা।
১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, সেটির উদয় ঘটে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরে। বহু শতাব্দীর স্বপ্ন-স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাধ্যমে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ ২৪ বছরের লড়াই-সংগ্রাম এবং তাঁর নেতৃত্বে-নির্দেশে বাঙালী জাতির এক সাগার রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে বিজয়, লাল-সবুজ পতাকা সংবলিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশজুড়ে চলমান ‘মুজিববর্ষ’-এর মধ্যেই এসেছে বাঙালীর বিজয় দিবস। আগামী বছরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনটিকে সামনে রেখে এবারের বিজয় দিবস বিশেষ তাৎপর্য বয়ে এনেছে পুরো জাতির জীবনে। কিন্তু ৪৯ বছর পরেও একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা মাঝে মধ্যেই ফণা তোলার চেষ্টা করছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার মতো ঔদ্ধত্য ও স্পর্ধা দেখাচ্ছে। তাই পাকিস্তান ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে এক অন্যরকম গণজাগরণ ও আবহে এবার বিজয় দিবস উদযাপন করছে গোটা জাতি। এবারের বিজয় দিবস মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মৌলবাদ, জঙ্গীবাদের মিলনস্থল বিএনপিসহ উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে আবারও পরাজিত করে রাজাকার-জঙ্গীমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার দৃপ্ত শপথে বলীয়ান হচ্ছে দেশের মানুষ।
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস-২০২০ উদযাপনের লক্ষ্যে খুলনায়
স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে আজ (১৬ ডিসেম্বর) সূর্যোদয়ের সাথে সাথে গল্ল¬¬ামারী শহিদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে। প্রত্যুষে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে একত্রিশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের শুভ সূচনা করা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি ভবন ও প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এছাড়া শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ এবং বিভিন্ন স্থাপনাসমূহ জাতীয় পতাকাসহ বিভিন্ন পতাকা দ্বারা সজ্জিত করা হবে।
আজ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষ হতে অনলাইনে ‘ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জন’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ডাকযোগে ও ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনলাইন, ই-মেইলে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজনসহ অনলাইন সুবিধাসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
বাদজোহর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য এবং জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিভিন্ন মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। ঐ দিন সকল হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, ডে-কেয়ার, শিশু বিকাশ কেন্দ্র ও ভবঘুরের আশ্রয় কেন্দ্রসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
আজ শিশু একাডেমি কার্যালয়ে অনলাইন, ই-মেইল ও ডাকযোগে শিশুদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। এছাড়া আজ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ থাকায় খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে অনলাইনে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিষয়ক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।

Related posts