
স্টাফ রিপোর্টার: বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান শিক্ষা ক্ষেত্রে গবেষণার পাশাপাশি উদ্ভাবনী দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন আমাদের গ্রাজুয়েটদের কেবলমাত্র একজন কেরানি হওয়ার স্বপ্ন দেখলে চলবে না। তাদেরকে বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। উদ্যোক্তা হতে হবে এবং নতুন নতুন উদ্ভাবন করতে হবে। তিনি বলেন দেশে এখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক গতিশীলতা তৈরি হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে তিনি স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন তিনি শুধু একটি স্বাধীন দেশ ও জাতির স্বপ্নই দেখেননি তিনি ক্ষুধামুক্ত, শোষণমুক্ত এবং সমৃদ্ধ দেশের স্বপ্নও দেখেছিলেন এবং সে লক্ষ্যেই কাজ শুরু করে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখা সেই স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথেই এগিয়ে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষে ভর্তিকৃত নবীন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে ওরিয়েন্টেশন বক্তা হিসেবে তিনি এ কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. প্রাণ গোপাল দত্ত। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ, সমাজ বিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. শাহনেওয়াজ নাজিমুদ্দিন আহমেদ, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস, ছাত্রবিষয়ক পরিচালক প্রফেসর মোঃ শরীফ হাসান লিমন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক কমিটির আহবায়ক চারুকলা স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ মনিরুল ইসলাম। উপাচার্য প্রথাগতভাবে নবীন শিক্ষার্থীদের শপথ বাক্য পাঠ করান এবং স্কুলসমূহের ডিনবৃন্দ ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক স্ব স্ব স্কুল ও ইনস্টিটিউটের নবাগত শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন।
ড. আতিউর বলেন, এখন আমাদের অর্থনীতিতে মুল্যস্ফীতি কমছে। রিজার্ভ উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে বেড়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। জীবনমান বেড়েছে। এখন ভোগের বৈষম্য হ্রাস করতে হবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ক্রুটিগুলো সারিয়ে তুলে শিক্ষাকে প্রাণবন্ত করতে হবে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সৃষ্ট প্রবল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে শিক্ষা ক্ষেত্রে উদ্ভাবনা ও সৃজনশীলতার উপর জোর দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাভাবনাসহ বিভিন্ন উক্তি ও উদ্বৃতি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার যে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে এ বিশ্ববিদ্যালয় একদিন অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজে পরিণত হবে। এ লক্ষ্যে তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করে এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন আজকের বাংলাদেশকে আমাদের এই নবীন শিক্ষার্থীরা এগিয়ে নিয়ে যাবে। তারাই হবে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ম্যাজিসিয়ান, উদ্যোক্তা।
বিশেষ বক্তা ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, শিক্ষা ছাড়া জীবন অচল। জীবনের সমস্ত পরতে পরতে রয়েছে শিক্ষা। তিনি বলেন শিক্ষা নিতে যেয়ে অথবা শিক্ষা নিয়ে আমরা অনেকেই অনেক পেশায় শপথ গ্রহণ করে থাকি। কিন্তু শপথ রক্ষা করে চলে কয়জন। আসলে নৈতিকতার জায়গাটাই আসল। শিক্ষার্থীদেরকে তিনি পিতা-মাতা এবং শিক্ষকদের প্রতি আজীবন শ্রদ্ধাশীল থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, তাদের কাছ থেকে যা পাওয়া যায় তা আর কোথাও থেকে পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, মোবাইল প্রযুক্তির অপব্যবহার, অতিব্যবহারে যুবসমাজ এমনকি কিশোররাও আসক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে তারা বই থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু বই পড়ার আনন্দ, আর বই পড়ে যে শিক্ষা বা জ্ঞানের প্রসার ঘটে তা অন্যপন্থায় পাওয়া কঠিন। তিনি বলেন একজন চিকিৎসক হিসেবে এখন দেখতে পাচ্ছি কিশোর বয়সী বা নবীন যুবক-যুবতীদেরও শ্রবণ সমস্যা বাড়ছে। এটা মোবাইলে অতিরিক্ত সময় কথা বলার কুফল। মোবাইলে একটানা কথা না বলে মাত্র বিশ সেকেন্ডে প্রয়োজনীয় কথা সারা উত্তম বলে অভিমত ব্যক্ত করেন এই খ্যাতিমান চিকিৎসক।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান এই অনুষ্ঠানে যে দুইজন খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব তাদের জ্ঞানগর্ভ বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের উপদেশমূলক নানা তথ্য, তত্ত্ব ও শিক্ষণীয় বিষয় তুলে ধরেছেন সেগুলো আত্মস্থ করে শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের জীবন গঠন এবং ভবিষ্যতের অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানান। এছাড়া তিনি নিজেদেরকে মাদকমুক্ত, নেশামুক্ত রেখে বিশ্ববিদ্যালয়কে মাদকমুক্ত রাখার পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য নবীন শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন আমরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি কোয়ালিটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি প্রকল্প শেষ হওয়ার আগেই আরো একটি বড় প্রকল্প তৈরি করার কাজ আমরা শুরু করেছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কেবল অবকাঠামোগতভাবে সমৃদ্ধ হলে চলবে না, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হলো শিক্ষাদানের পাশাপাশি গবেষণা করা। গবেষণার অর্থই হচ্ছে সত্যের অনুসন্ধান, নতুনত্ত্বের সন্ধান এবং নীতি-নৈতিকতা, মুক্তচিন্তার বিকাশ, মানবিকতা ও মূল্যবোধকে প্রতিষ্ঠা করা। নবীন শিক্ষার্থীরা সে মূল্যবোধ ধারণ করেই জীবনের অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পরে ওরিয়েন্টেশন বক্তা ও বিশেষ বক্তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম খচিত ক্রেস্ট উপহার দেওয়া হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় কৃতিত্ব অর্জনকারী শিক্ষার্থীদেরকে কৃতিত্বের স্মারক ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
এছাড়া বিকেল সাড়ে তিনটায় অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের কুয়েস (খুলনা ইউনিভার্সিটি ইকোনোমিক্স সোসাইটি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মাইক্রোইকোনোমিক্স ট্রান্সফরমেশন অব বাংলাদেশ শীর্ষক অর্থনীতির ওপর একক বক্তব্য রাখেন ড. আতিউর রহমান।
তিনি আমাদের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি ও উজ্জ্বল সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে পাওয়ার পয়েন্টে প্রেজেন্টেশন দেন। পরে তিনি শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের প্রধান প্রফেসর ড. শাহনেওয়াজ নাজিমুদ্দিন আহমেদ।