
জি,এম আব্দুস ছালাম, ডুমুরিয়া (খুলনা) : প্রায় ৯ বছর পর অপ্রকৃতিস্থ হয়ে ঘর ছেড়ে আসা আইয়ুব হোসেন বিশ্বাস (৫৫) নিজ বাড়ি স্বজনদের কাছে ফিরে গেলেন।
স্বজনদের কাছ থেকে জানা যায়, বিদেশে যাওয়ার জন্য জমি বিক্রি করে টাকা জমা দেয়ার পর হঠাৎ অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এক পর্যায়ে কথা বন্ধ হয়ে যায়। ঈদ-উল-আযহার একদিন আগে সকলের অজান্তে তিন মেয়ে,এক ছেলে,স্ত্রী মর্জিনা বেগম ও মা ওছিরননেছাকে ছেড়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন। একথা জানান স্ত্রী মর্জিনা বেগম ও ছোট মেয়ে সেলিনা আক্তার। ঘুরতে ঘুরতে ডুমুরিয়া উপজেলার বাস স্ট্যান্ডের যাত্রী ছাউনিতে আশ্রয় নেন। কারো সঙ্গে কথা বলতেন না। কেউ কিছু দিলে নিতেন না। কি খেতেন তাও কারো চোখে কখনও পড়েনি।
একদিন ছোট শিশু শেখ মাইশা রহমান, পিতা শেখ হাবিবুর রহমানের সাথে স্কুলে যাওয়ার সময় যাত্রী ছাউনিতে অপ্রকৃতিস্থ মধ্যবয়সী এই লোকটিকে দেখতে পায়। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে শিশু মাইশার দিকে। পিতার কাছ থেকে দুটি টাকা নিয়ে লোকটিকে দেয়। হাত বাড়িয়ে টাকা নেয়। এসময় পিতাকে কিছু খাবার কিনে দিতে বলেন। তিনি খাবারও নেন। বাড়ি ফিরে শিশু মাইশা মাকে ঘটনাটি জানায়।
শিশু মাইশার কথা মতো লোকটিকে বাড়িতে নিয়ে যান শেখ হাবিবুর রহমান। পরিবারের সকলে মিলে প্রায় ৮বছর ধরে সেবাযতœ আর চিকিৎসা করাতে থাকেন। সারারাত না ঘুমিয়ে শুধু চিৎকার করতেন বলে জানা যায়।
চলতি মাসের প্রথমদিকে হঠাৎ রাতে চিৎকার না করে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন আইয়ুব হোসেন। সকালে খাবার দিতে গেলে দেখেন তখনও তিনি ঘুমিয়ে আছেন। কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পর খাবার খেতে বলেন। এসময় তার নাম ঠিকানা জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি যশোর জেলার ঝিকরগাছা থানার মাগুরা ইউনিয়নের আঙ্গারপাড়া গ্রামের আরশাব আলী বিশ্বাসের ছেলে বলে পরিচয় দেন। উক্ত ঠিকানায় হাবিবুর রহমান যোগাযোগ করলে পরিবারের সদস্যরা দেখতে আসেন।
স্ত্রী, কন্যা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের দেখে তিনি চিনতে পারেন। তারাও তাকে চিনতে পেরে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। গত শুক্রবার সকালে স্ত্রী মর্জিনা বেগম, ছোট মেয়ে সেলিনা আক্তার আইয়ুব হোসেনকে নিতে আসেন।
এসময় শেখ হাবিবুর রহমানের বাড়ির আঙিনায় এলাকাবাসী ও সংবাদকর্মীদের কথা হয় উভয় পরিবারের সদস্যদের সাথে। তখন জানা যায় হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা। বিদায় এই মুহুর্তে ছেড়ে যাওয়া আর ফিরে পাওয়া নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। পিতা আর স্বামীকে পেয়ে যেমন আবেগে আপ্লুত আইয়ুব হোসেনের পরিবার। তেমনি দীর্ঘদিন সেবাযতেœ মায়ার জালে বাঁধা হাবিবুর পরিবারকে অশ্রুসিক্ত হতে হয়েছে। বিদায় মুহুর্তে বাড়ির আঙিনায় উপস্থিত সকল মানুষের মুখ থেকে একটি কথা উচ্চারিত হয় ‘মানুষ মানুষের জন্য।